জামায়াতসহ সাতটি ইসলামী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলজুড়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে । সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা আরও বাড়ছে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের আশঙ্কা, সন্ধ্যা নাগাদ এ যানজট ভয়াবহ রুপ নেবে। এতে নগরজীবন অচল হয়ে পরার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তীব্র যানজটের কারণে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, প্রেস ক্লাব, পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল ও শাহবাগ এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কারণে জনসাধারণকে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক), খেলাফত মজলিস (আহমদ আবদুল কাদের), নেজামে ইসলাম পার্টি এবং জাগপা—এই সাতটি দল প্রায় অভিন্ন দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর অংশ হিসেবে আজকের (বৃহস্পতিবার) কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে দলগুলো।
দুপুরে জোহরের নামাজের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করে, এরপর সেখান থেকে মিছিল বের হয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন মোড় হয়ে। আসরের নামাজের পর একই স্থানে সমাবেশ করছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক)। তাদের কর্মসূচী শুরুর আগে বেলা সাড়ে ৩টা না বাজতেই দলীয় নেতাকর্মীদের মিছিল বিজয়নগর, কাকরাইল হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বিকেল ৩টায় খেলাফত আন্দোলনের সমাবেশ হয় প্রেস ক্লাবের সামনে, যেখান থেকে মিছিল চলে যায় বায়তুল মোকাররম অভিমুখে। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় সমাবেশ করে জাগপা; পরে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত মিছিল করে পুনরায় বিজয়নগরে ফিরে আসে।
বিকেল ৫টায় প্রেস ক্লাব এলাকায় সমাবেশ করবে নেজামে ইসলাম পার্টি।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ শুরু হয় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে, যেখান থেকে মিছিলটি পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যায়।
এই সব কর্মসূচির কারণে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, সচিবালয়, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, বাংলামোটর, ধানমন্ডি ও নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে যান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। বিকেলের দিকে মূল সড়কগুলোতে রিকশা, বাস, প্রাইভেটকারসহ নানা যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। যানজটে আটকে পড়েন হাজারো মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অফিসফেরত কর্মজীবী এবং রোগী পরিবহণকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলো।
বিশেষ করে শাহবাগ ও কাকরাইল এলাকায় যানজটের প্রভাব পড়ে নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে। এতে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ল্যাবএইড এবং পপুলার হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে যখন একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়, তখন গণজমায়েতের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। বিকল্প রাস্তাও তখন চাপ নিতে পারে না, ফলে গোটা শহরের গতি স্থবির হয়ে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক নেতাদের আমরা অনুরোধ করি যেন জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়, এমন এলাকায় কর্মসূচি না দেয়। বিশেষ করে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল-সমাবেশে পুরো শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে মানুষ যেমন কষ্ট পায়, তেমনি সময়, শ্রম ও অর্থ—সবই অপচয় হয়।”
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আজই ঢাকায় এসেছেন হাজারো পরীক্ষার্থী। যানজট ও গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলায় তাদেরকেও ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।