Home আন্তর্জাতিক নেপালে জেন-জি অভ্যুত্থানের নেপথ্যে

নেপালে জেন-জি অভ্যুত্থানের নেপথ্যে

19
0

চলতি সপ্তাহে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীরা যখন রাস্তায় নামেন, তখন বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ও হতাশার প্রকাশ বিস্ফোরণ হয়ে জ্বলে ওঠে। কয়েক দিন আগে প্রধান সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা কেবল তাদের ক্ষোভের আগুনে নাড়া দিয়েছে। নেপালের জেন-জির এ বিক্ষোভ কেবল তাদের নানা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই ছিল না, এটা ছিল তাদের দীর্ঘদিন ধরে চলা সামাজিক বঞ্চনায় ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া।

গতকাল মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। নেপালে রাজতন্ত্র থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রে আসার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। এ রূপান্তরের সময়কালে অনেক সামাজিক সমস্যা দানা বাঁধতে থাকে। এ নিয়ে তরুণদের মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। এর জেরেই বিক্ষোভে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ও তাঁর সরকারের অন্য মন্ত্রীরা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তবে এখানেই বিষয়টি শেষ নয়। হিসাবনিকাশ কেবল শুরু হয়েছে।

বেকারত্ব ও বৈষম্য

নেপালের সবচেয়ে সমস্যা বেকারত্ব। দেশটির বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকারত্বের কারণে জর্জরিত। তারা চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত তিন কোটি জনসংখ্যার পাহাড়ি দেশ নেপালে চাকরি খুঁজে বের করা কঠিন কাজ। ২০২৪ সালে নেপালের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস দেশটির জীবনযাপনের মান নিয়ে জরিপ করে। তখন নেপালে বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ১ পয়েন্টেরও বেশি।

এ পরিসংখ্যানগুলো সমস্যার তীব্রতাকে তুলে ধরে। এগুলো কেবল আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, বেশির ভাগ নেপালিকে বাদ দেয়। যারা আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি ছাড়াই কাজ করেন, বেশির ভাগই কৃষিকাজ করেন। বেকারত্ব মূলত তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত, যারা চাকরির প্রত্যাশা করেন।

দেশে কাজের সুযোগ না পেয়ে প্রতিদিন শত শত তরুণ-তরুণী মালয়েশিয়া ও পারস্য উপসাগরের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কাজ করার জন্য দেশ ছেড়ে যান। এ ছাড়া নেপালের অনেকেই ভারতে কাজের জন্য যান। তারা সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সরকারি তথ্য দেখায়, গত বছর সাত লাখ ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নেপাল ছেড়েছেন। তারা বিভিন্ন দেশে নির্মাণ বা কৃষিকাজ করতে গেছেন।

যেভাবে সূত্রপাত

গত বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় নেপালের কে পি শর্মা অলি সরকার ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞা জনমনে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণী, যাদের আমরা জেন-জি বলে চিনি, তাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। এর প্রতিবাদে গত সোমবার বিক্ষোভ শুরু করেন নেপালের হাজার হাজার মানুষ।

বিক্ষোভ দমনে সরকার কঠোর হলে ওই দিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন নিহত হন। আহত হন চার শতাধিক। গতকাল মঙ্গলবার এ নিহত বেড়ে ২২ জনে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হয়। সেই কারফিউ ভেঙে গতকাল মঙ্গলবার ভোরেই বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা।

সুত্র :সমকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here