কুষ্টিয়ায় নিখোঁজ হওয়া এক অটোরিকশাচালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মোল্লাতেঘড়িয়া এলাকার কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের পাশে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে ওই চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার মোল্লাতেঘড়িয়া আদর্শপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় দবির উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন পেশাদার অটোরিকশাচালক ছিলেন। নিহতের পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত ৯টার দিকে রফিকুল ইসলাম অটোরিকশা নিয়ে বাসা থেকে বের হন। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন শুক্রবার ভোরে এলাকাবাসী কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের পাশে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় রফিকুলের মরদেহ দেখতে পান। সাথে সাথে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে মডেল থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মরদেহটি গলায় দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত ছিল এবং তাঁর মুখ গামছা দিয়ে শক্ত করে বাঁধা ছিল, যা দেখে এলাকাবাসী এটিকে নিছক আত্মহত্যা মনে করছেন না। বরং বেশিরভাগই দাবি করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহতের ছেলে নিলয় বলেন, বাবা রাত্রে বের হয়েছিলেন অটোরিকশা নিয়ে। সারা রাত খুঁজেও পাইনি। সকালে কুমারখালীতে থাকাকালীন খবর পাই গাছে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। আমার বিশ্বাস, বাবাকে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।” ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সকাল ১০টা থেকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে এবং সৃষ্ট হয় তীব্র যানজট। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ চলার পর দুপুর ১২টার দিকে এলাকাবাসী মহাসড়ক ছেড়ে দেয়। তবে এরপর তারা মরদেহ নিয়ে শহরের অভ্যন্তরীণ সড়ক মোল্লাতেঘড়িয়া থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা বলেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে, আমরা মরদেহ দাফন করবো না এবং আন্দোলন চলবে।” এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে এটি রহস্যজনক মৃত্যু হিসেবে তদন্ত করছি। মরদেহে যে আলামত পাওয়া গেছে, তাতে পরিকল্পিত হত্যার সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ট্র্যাকিংসহ ডিজিটাল মাধ্যমে তদন্ত অব্যাহত আছে। দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ শুরু করেছে।” ঘটনাটি কুষ্টিয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, শহরের মাঝখানে একজন নিরীহ অটোচালক যদি এমন নির্মম হত্যার শিকার হন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? এ ঘটনায় রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোও নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।