Home জাতীয় ডিসি প্রত্যাহার নিয়ে বিপাকে জনপ্রশাসন

ডিসি প্রত্যাহার নিয়ে বিপাকে জনপ্রশাসন

5
0

জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন ১৯৬ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ২১ জন রয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এ সংক্রান্ত পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন গত ২০ মার্চ জারি হলেও এখনও সেসব ডিসি আগের দায়িত্বেই আছেন। অথচ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির পর তাদের মাঠ প্রশাসন থেকে ফিরিয়ে আনার কথা। এ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কারণ বিতর্কহীন ডিসিদের পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে মন্ত্রণালয়ের। এ ক্ষেত্রে ফিটলিস্টের পর পদায়ন নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন উৎস বা গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া নাম-পরিচয় যাচাইয়ে অনেক কর্মকর্তার ব্যাপারে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে রাজনৈতিক চাপও।

সূত্রমতে ঢাকা, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা।

ডিসি পদে রয়েছেন এ ব্যাচের ২৬ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি। ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও রদবদল আসতে পারে।

নতুন করে ডিসি নিয়োগের ফিটলিস্ট করতে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তাদের একটি অংশ একসময় নিজেকে আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে অকপটে পরিচয় দিতেন। পটপরিবর্তনের পর এখন তারা ভিন্ন দলের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন, চলছে তদবিরও। কিন্তু তাদের কারও কারও আমলনামা ঘেঁটে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী’ হিসেবে তথ্য আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পছন্দের ব্যক্তিকে ডিসি নিয়োগে একাধিক রাজনৈতিক দলের তদবির ও চাপ।

জনপ্রশাসন সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করা কঠিন কাজ। বিতর্ক এড়াতে নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই বাছাইকাজ শেষ করা হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডিসি-এসপিদের পদায়নের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন ছাড়াও একটি জেলায় প্রশাসনের শীর্ষকর্তা হিসেবে ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে। নিকট অতীতে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতির পর দীর্ঘদিন আগের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার নজির কম।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিসি নিয়োগ নিয়ে তোলপাড় হয়। তোপের মুখে ৯ ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়। রদবদল করা হয় ৪ জেলার ডিসিকে। ডিসি হিসেবে যাদের নাম প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুড়বৃত্তি কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে। এ ছাড়া ডিসি পদে পদায়নের ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন পক্ষের দেনদরবার। মূলত এ সবের সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাই সাড়ে ৫ মাস আগে ডিসি ফিটলিস্ট তৈরি হলেও পদায়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে শরীয়তপুরের ডিসিকে নৈতিক স্খলনের কারণে সরিয়ে দেওয়া হলেও সেখানে কেউ দায়িত্ব পাননি। এমন লেজেগোবরে অবস্থা কাটাতে আর কত সময় লাগবেÑ এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে প্রশাসনে।

বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম ও ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দেন। আর ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭-০৮) আমলে। ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। তাই তাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ডিসি হিসেবে মাঠে রাখা নিয়ে অমত রয়েছে। যদিও গত ২১ জুন ২৮তম ব্যাচের বেশকিছু কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের তরফে।

এদিকে ডিসি পদায়নে বিলম্ব হওয়ায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা পড়েছেন জটিলতায়। কারণ ডিসি পদে ফিটলিস্ট তৈরির জন্য ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বাছাই করে ডিসি পদে পদায়ন করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অথচ ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও ডিসি ফিটলিস্টভুক্ত হওয়ার যোগ্য হয়েছেন।

এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে। যদিও ডিসি ফিটলিস্টের জন্য সাক্ষাৎকার দিতে যাননি, এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাদের একজন গতকাল জানান, এ মুহূর্তে ডিসি হলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ভিন্ন চোখে দেখতে পারে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পর অনেক সময় বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন হলেই ঢালাওভাবে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরের মতো সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হয়। অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। পদোন্নতিতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। ফলে অনেকেই নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন যারা মাঠে আছে, তাদের মধ্যে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন যেসব ডিসি, এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আবার ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৪৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়েছে।

সুত্র:আমাদের সময়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here