শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় যে আক্রমণ চালিয়েছে, তা আবারও প্রশ্ন তুলেছে—আসলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা কতটা সম্ভব?
লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মার্চ মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি মোটেই সহজ কাজ নয়। এর জন্য ব্যাপক মাত্রার অস্ত্রশক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহায়তা প্রয়োজন হবে। তবু সফলতা নিশ্চিত নয়, বিশেষত যেসব পারমাণবিক স্থাপনা গভীরভাবে মাটির নিচে গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করাটা অত্যন্ত কঠিন।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, এমন জটিলতা এবং বিপুল সংঘাতের ঝুঁকির কারণে এই ধরনের হামলা হওয়া উচিত ‘চূড়ান্ত বিকল্প’ হিসেবে
নাতানজে আঘাত, কিন্তু কতটা কার্যকর?
ইসরায়েলের হামলায় নাতানজের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাটি আঘাতপ্রাপ্ত হলেও, মাটির গভীরে থাকা প্রকৃত স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা জানা যায়নি।
নাতানজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্রপাতি ঠিক কত গভীরে রয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানা না গেলেও অনুমান করা হয়, এটি প্রায় ৮ মিটার (২৬ ফুট) গভীরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের বিদ্যমান বোমা সাধারণত সর্বোচ্চ ৬ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ভেদ করতে পারে—এটি নির্ভর করে মাটির গঠন ও কংক্রিটের শক্ত স্তরের ওপর।
ইরানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফোর্দো পারমাণবিক প্লান্ট, যা আরো গভীরে অবস্থিত বলে মনে করা হয়।অনুমান অনুযায়ী, এটি ৮০ থেকে ৯০ মিটার (২৬২ থেকে ২৯৫ ফুট) নিচে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোম্ব’ (জিবউই-৫৭), যা সর্বোচ্চ ৬০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে–তা দিয়েও ফোর্দো ভাঙা সম্ভব নয়। এই বোমা কেবল মার্কিন বিমানবাহিনীর বি-২ স্টেলথ বোমার ব্যবহারেই ছোড়া সম্ভব—যা ইসরায়েলের নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি এই বোমা সরবরাহও করে, ইসরায়েল তা ব্যবহার করতে পারবে না।
ইরানের বাড়তি সুরক্ষা কৌশলপ্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নকশায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ‘যদি কোনো স্থাপনাতে একাধিক সরু সুড়ঙ্গ, বিস্ফোরণরোধী দরজা এবং বহুমুখী প্রবেশ ও প্রস্থানপথ থাকে, তাহলে সেটি ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন হবে।’বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস করা ইসরায়েল কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও সহজ কাজ নয়। প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত প্রতিবন্ধকতার কারণে বিষয়টি এখনো একটি দুরূহ সম্ভাবনা, যা কেবল চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে বিবেচিত হতে পারে। বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে এবং এই প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’হামলার বিস্তারিত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
কাটজের বিবৃতির বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি : এএফপি
ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষে ইসরায়েল বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি বিমানঘাঁটি পরিদর্শনকালে সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা বিজয় অর্জনের পথে।’এর আগে তেহরানের আকাশের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন’ করার দাবি করেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে ইরানের মিসাইল লঞ্চার বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্রের ‘এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস’ করে দেওয়ারও দাবি করেন তারা।
সেই দাবিই পুনর্ব্যক্ত করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দুটি লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি : পারমাণবিক হুমকি নির্মূল ও ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল করা।’এ ছাড়া ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের ইরান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেন নেতানিয়াহু। বিমানঘাঁটি পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত সেনাদের উদ্দেশে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তার সাহায্যে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব এবং সফল হবো।
বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা (যুদ্ধ) চালিয়ে যাব।’
আরো পড়ুন
এএফপির বিশ্লেষণ : চূড়ান্ত সংকটে খামেনি?
অন্যদিকে তেহরানের বাসিন্দাদের ক্ষতিসাধনের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। যদিও এর আগে তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য তেহরানের বাসিন্দাদের ‘মূল্য দিতে হবে’। ইরানের সাধারণ মানুষের ওপর হামলার এই হুমকি ঘিরে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর তিনি এখন তার আগের বক্তব্যের নতুন ব্যাখ্যা সামনে এনেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘তেহরানের বাসিন্দাদের শারীরিকভাবে ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই।’এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চার দিন ধরে যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, সেটি বন্ধে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। দুজনই আলাদাভাবে জানিয়েছেন, সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে তারা মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন।সমস্যার সমাধানে রাশিয়া বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘সংঘাত নিরসনের জন্য রাশিয়ার আগের প্রস্তাব এখনো বহাল রয়েছে। যদিও পরিস্থিতি এখন আরো জটিল হয়ে পড়েছে।
’এ ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের অবসান ঘটাতে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে প্রস্তুত বলে ইরানকে জানিয়েছেন এরদোয়ান।অন্যদিকে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত থাকায় আপাতত ইরানের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। সোমবার ইরানের সীমান্তঘেঁষা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাদির বখশ পিরকানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ইরানের সঙ্গে তাদের প্রদেশের পাঁচটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে শুক্রবার থেকে ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৪-এ পৌঁছেছে।
১৪ জুন তেহরানে একজন বিক্ষোভকারী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছবি হাতে ধরে আছেন। ছবি : এএফপি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি অতীতে বহু সংকট পেরিয়ে এলেও ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা এবার তার নেতৃত্বাধীন ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা ও ব্যক্তিগতভাবে তার শারীরিক নিরাপত্তাকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্বে থাকা খামেনি দীর্ঘ সময় ধরে নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক টানাপড়েন ও সহিংসভাবে দমন করা অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ মোকাবেলা করে এসেছেন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ সালে নারী নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের সময়ও তিনি ক্ষমতায় অবিচল ছিলেন।৮৬ বছর বয়সী এই নেতার উত্তরসূরি নিয়ে ইরানে আগে থেকেই জল্পনা চলছিল।
কিন্তু বর্তমান সংকটে তার নেওয়া পদক্ষেপই ঠিক করে দেবে ১৯৭৯ সালে শাহকে হটিয়ে চালু হওয়া ইসলামী বিপ্লব পরবর্তী ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ।একই সঙ্গে খামেনির শারীরিক নিরাপত্তাও এখন হুমকির মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল তাকে হত্যা করতে চাইলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ইসরায়েল এখনো এমন পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক আরাশ আজিজি বলেন, ‘খামেনি এখন তার শাসনের গোধূলিলগ্নে। বয়স ৮৬ বছর। তার হাতে আর দৈনন্দিন শাসনের ভার নেই। তা এখন ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত বিভিন্ন পক্ষের হাতে।
’তিনি আরো বলেন, ক্ষমতার এই পালাবদল প্রক্রিয়া চলছিল আগেই, কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ সেটিকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।‘আত্মঘাতী সংকটে’ খামেনি
এদিকে ইসরায়েল একাধিক ইরানি শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করতে সক্ষম হওয়ায় তাদের গোয়েন্দা সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং জল্পনা তৈরি হয়েছে—ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরাসরি খামেনিকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন কিনা।
সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খামেনি কখনো ইরান ত্যাগ করেননি। সর্বশেষ বিদেশ সফর ছিল ১৯৮৯ সালে উত্তর কোরিয়ায়, তখন তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার গতিবিধি কঠোর গোপনীয়তার আওতায় রাখা হয়।
আজিজির মতে, ইসরায়েল ইরানের ভেতরে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনব্যবস্থা বদলের কোনো পরিকল্পনা নিয়েও ভাবতে পারে বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একের পর এক হত্যা করে তেহরানের অবস্থানে মৌলিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাতে পারে।কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেন, খামেনি একপ্রকার ‘আত্মঘাতী সংকটে’ পড়েছেন এবং তার এখন উচ্চ প্রযুক্তিযুক্ত যুদ্ধ সামলানোর মতো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দিলে তার কর্তৃত্ব আরো ক্ষুণ্ন হবে। আবার শক্ত প্রতিক্রিয়া দিলে তা তার ও শাসনব্যবস্থার অস্তিত্বকেই ঝুঁকিতে ফেলবে।’
সংঘাত এড়ানোর কৌশল ভেঙে পড়েছে
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের নীতিনির্ধারণী পরিচালক জেসন ব্রডস্কি বলেন, খামেনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র বক্তব্য দিলেও বরাবরই সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে চলেছেন। বরং হিজবুল্লাহর মতো প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে শত্রুদের মোকাবেলা করেছেন। কিন্তু চলমান হামলা সেই কৌশলের অবসান ঘটিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৮৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই খামেনি সংঘাত ইরানের সীমান্তের বাইরে রাখার কৌশলকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এবার তিনি গুরুতর ভুল হিসাব করেছেন।’
খামেনি নিজেও একবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন—১৯৮১ সালে। ব্রডস্কি মনে করেন, এই স্মৃতিই হয়তো বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে কিছুটা পথ দেখাতে পারে। তবে বর্তমান হামলার মাত্রা ও গতি-প্রকৃতি তেহরানের সামর্থ্যের বাইরেই চলে যাচ্ছে।
প্রথম ধাক্কাটি আসে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলায়, যার সময় ও মাত্রা ইরানি নেতৃত্বকে পুরোপুরি চমকে দেয়। এমন এক সময় এই হামলা হলো, যখন অর্থনৈতিক সংকটে অতিষ্ঠ জনগণের নতুন কোনো বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল এবং ওমানে ইরানি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন সংলাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হোলি ড্যাগরেস বলেন, ‘এই হামলা দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভকে আরো উসকে দিচ্ছে। অনেক ইরানিই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অবসান চায়। তবে তারা রক্তপাত ও যুদ্ধের বিনিময়ে সেটা চায় না।’
‘শক্ত থাকুন’
এদিকে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দেন, এই হামলা হয়তো ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ ডেকে আনবে। যদিও তিনি বলেন, এমন পরিবর্তন আনতে হবে ইরানিদেরই।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইরানি শাসনব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ৮০ শতাংশ মানুষ এই ধর্মীয় স্বৈরাচারীদের ছুড়ে ফেলতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় ইসরায়েল খামেনিকে হত্যা থেকে পিছিয়ে এসেছে কি না—এই প্রশ্নে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যা প্রয়োজন, তা করব। আমরা করবই। এবং আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র জানে তাদের জন্য কী ভালো।’
তবে ইরানি বিরোধী শিবির এখনো বিভক্ত। স্বদেশ ও প্রবাসে বিভাজিত এই আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ সাবেক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভির ছেলে ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র রেজা পাহলাভি ইরানিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘শক্ত থাকুন, আমরা জিতব।’
যদিও এখনো বড় ধরনের কোনো গণবিক্ষোভের খবর মেলেনি। তবে প্রবাসে প্রচারিত কিছু পারসিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল এমন ভিডিও সম্প্রচার করেছে, যেখানে কিছু মানুষকে খামেনিবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে আরাশ আজিজি সতর্ক করে বলেন, ‘এই যুদ্ধ বা সংকটের পরিণতি যে একটি গণ-অভ্যুত্থানে গিয়ে শেষ হবে এবং দেশের বাইরে থাকা কোনো বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসবে—এমন ধারণার বাস্তব ভিত্তি নেই।’
ইরানের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।রবিবার (১৬ জুন) পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাদির বখশ পিরকানি এ তথ্য জানিয়েছেন।কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়, চাগাই, ওয়াশুক, পাঞ্জগুর, কেচ ও গাদার—এই পাঁচ জেলার সব সীমান্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের এই পাঁচ জেলার সঙ্গে ইরানের সীমান্ত রয়েছে।
চাগাই জেলার সীমান্ত কর্মকর্তা আতাউল মুনিম বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইরানে প্রবেশ বন্ধ থাকবে। তবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশে ফেরার সুযোগও থাকছে। আতাউল মুনিম বলেন, আজ প্রায় ২০০ জন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ফেরার কথা রয়েছে।
খবরে বলা হয়, সীমান্ত বন্ধে দৈনিক মজুরি শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই সীমান্তগুলো দিয়ে মূলত ফল, শাকসবজি এবং গৃহস্থালীর মতো ছোট জিনিসপত্র কেনাবেচা করা হয়।গত অর্থবছরে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৮ বিলিয়ন ডলার। এটি ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে উভয় দেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।