বাংলাদেশ ও ভুটানের সাম্প্রতিক সীমান্তপেরিয়ে সহযোগিতা দুই দেশের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্বনমুক্ত বাণিজ্যের ওপর জোর দিতে হবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্ক: পারস্পরিক সমৃদ্ধির পথে বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনায় সভাপতিত্বের পাশাপাশি সঞ্চালকের দায়িত্বও পালন করেন ড. মোস্তাফিজ।
তিনি বলেন, ভুটানের পণ্য প্রতিযোগিতামূলক করতে পরিবহন ব্যয় কমানো জরুরি, আর সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার হতে পারে বড় সহায়ক শক্তি। মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর ভুটানের জন্য রপ্তানি ও আমদানিতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ছোট দেশগুলো একত্রে কাজ করলে পারস্পরিক সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করা প্রয়োজন।
ভুটানের রাজাকে পরিবেশবান্ধব নেতৃত্বের জন্য প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ভুটান বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের একটি যারা ঋণাত্মক কার্বন নিঃসরণকারী। এটি পরিবেশ সংরক্ষণে এক অনন্য উদাহরণ।” তিনি সতর্ক করে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কার্বন নিঃসরণ এখন বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে ‘কার্বন সীমান্ত সমন্বয় কর’ আরোপ করেছে, যার ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন নির্গমনের ওপর কর দিতে হচ্ছে। তাই বাংলাদেশকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব শিল্প উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত দাশো কারমা হামু দর্জি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন এবং কূটনৈতিক সহযোগিতায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি জানান, দুই দেশ সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন খাতেও যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাশফি বিনতে সামস বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ, রফতানি ও বাণিজ্য খাতে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ভুটানে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও বাড়ছে।
আলোচনায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর অ্যাম্বাসাডর মাশফি বিনতে শামস, বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিসসহ নীতি বিশ্লেষক, গবেষক ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র:যায়যায় দিন








