Home সারাদেশ দায়িত্বের গণ্ডি পেরিয়ে মানবিকতার জয়, ডিসি জাহিদুলের হৃদয়স্পর্শী উদ্যোগ

দায়িত্বের গণ্ডি পেরিয়ে মানবিকতার জয়, ডিসি জাহিদুলের হৃদয়স্পর্শী উদ্যোগ

11
0

সারাদেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা আবারও প্রমাণ করলেন, সরকারি দায়িত্বের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই একজন প্রকৃত প্রশাসকের কাজ।

গত শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রাজবাড়ী জেলার কালুখালি উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামের রিংকু শরীফের এক হৃদয়বিদারক পোস্ট। সেখানে বলা হয়, তার মেয়ে পিংকি শরীফ (২৫) সকালে রাজধানীর রাজারবাগের বেসরকারি বিএনকে হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর পরও শান্তি মেলেনি পরিবারের; হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল বাবদ ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা দাবি করে লাশ আটকে রাখে।

অসহায় পিতা রিংকু শরীফ ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে সপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান মেয়ের মরদেহটি হস্তান্তরের জন্য। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।

এই মর্মস্পর্শী ঘটনার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে আসে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার। বিষয়টি জানার পর তিনি তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনির সঙ্গে এবং অনুরোধ করেন ঘটনাটি মানবিক বিবেচনায় সমাধানের জন্য।

অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি দ্রুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল হাসানকে বিষয়টি জানান। পরে ডা. হাসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং রোগীর পরিবারের অসচ্ছলতার কথা তুলে ধরে মানবিক কারণে লাশ হস্তান্তরের অনুরোধ জানান।

এরপর দ্রুত পরিবর্তন আসে পরিস্থিতিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই যোগাযোগ করে রাত ১০টার দিকে ১৪ ঘণ্টা পর পিংকির লাশ ও নবজাতক কন্যাকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।

অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলি। তিনি দক্ষতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করেন। জাহিদুল ইসলাম সত্যিই একজন মানবিক ডিসি, তার কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত সচিব মহোদয়ের নির্দেশ পেয়ে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। মানবিক বিবেচনায় তারা লাশ হস্তান্তর করতে রাজি হন। এই উদ্যোগের মূল কৃতিত্ব নারায়ণগঞ্জের ডিসি সাহেবের।’

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। যদিও বিষয়টি আমার জেলার বাইরে ঘটেছে, তবু মানবিক দিক বিবেচনায় আমি নীরব থাকতে পারিনি। শেখ মোমেনা মনি স্যার ও ডা. মঈনুল হাসান মহোদয়ের আন্তরিক উদ্যোগেই বিষয়টি সমাধান হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দায়িত্বের বাইরে হলেও যে কোনো মানবিক কাজে যে আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা কোটি টাকা খরচ করেও পাওয়া সম্ভব নয়।’

পিংকির পিতা রিংকু শরীফ বলেন, ‘আমার মেয়ের নবজাতক কন্যাও রাতে মারা গেছে। মা ও মেয়েকে একসঙ্গে দাফন করেছি। জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি ও ডা. মঈনুল হাসান, তাদের আমি কখনও ভুলব না। তারা কেউ আমাকে চিনতেন না, তবুও পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘

পিংকিকে প্রথমে সাভার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে এক দালালচক্রের প্ররোচনায় তাকে ভর্তি করা হয় বিএনকে হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যুর পর বিলের অজুহাতে লাশ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞার দ্রুত মানবিক পদক্ষেপেই অবশেষে অসহায় পরিবারের হাতে ফিরে আসে পিংকির লাশ।

সূত্র :যায়যায় দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here