Home পরিবেশ ও জীববৈচিত্র নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর বৈপ্লবিক অগ্রগতি

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর বৈপ্লবিক অগ্রগতি

12
0

বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন প্রথমবারের মতো কয়লাকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে উন্নত দেশগুলোয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার গতি কম হলেও, দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি ছোট দেশ বিস্ময়করভাবে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, জ্বালানি আমদানি ব্যয়ের চাপ এবং স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা এসব দেশকে দ্রুত বিকল্প জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করেছে।ভুটান: জলবিদ্যুৎ নির্ভরতা থেকে বহুমুখী জ্বালানির পথে হিমালয়ের এই দেশ বহু বছর ধরে জলবিদ্যুৎ রপ্তানি করে আসছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয়ায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয়। ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনায় ভুটান এখন সৌর, বায়ু ও বায়োমাস বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মনোযোগ দিচ্ছে। আগামী বছর ৩০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।নেপাল: বৈদ্যুতিক গাড়িতে বিপ্লব

২০১৫ সালে ভারতের অনানুষ্ঠানিক অবরোধে আমদানিনির্ভর জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নেপাল বুঝতে পারে বিকল্পের প্রয়োজনীয়তা। বর্তমানে দেশটিতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার ৭৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন ব্যক্তিগত গাড়ির ৯০ শতাংশ বৈদ্যুতিক করার লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি। সরকারি প্রণোদনা, চার্জিং অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা দ্রুত খাতটিকে শক্তিশালী করছে।

শ্রীলংকা: সংকট থেকে নবায়নযোগ্য উদ্ভাবন ২০২২-২৩ সালের ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে দেশটিতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্নতা ও বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এ অভিজ্ঞতা শ্রীলংকাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে দ্রুত ধাবিত করেছে।

বর্তমানে প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ আসে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রিড ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সরবরাহ স্থিতিশীল করার মতো নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করছে।

মালদ্বীপ: ডিজেলনির্ভর দ্বীপ থেকে সৌরশক্তির পথে হাজারো দ্বীপের এ দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে দীর্ঘদিন আমদানিকৃত ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে তেলের দাম ওঠানামায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২০১৪ সালে “প্রিপেয়ারিং আউটার আইল্যান্ডস ফর সাসটেইন্যাবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট” প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্য রয়েছে। ধীরে ধীরে ডিজেল জেনারেটরের বদলে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি স্টোরেজ ও আধুনিক গ্রিড ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হচ্ছে।

ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ প্রমাণ করছে যে, ছোট দেশগুলোও সংকটকে সুযোগে রূপান্তর করতে পারে। কখনো রাজনৈতিক অবরোধ, কখনো অর্থনৈতিক সংকট, আবার কখনো প্রকৃতির অনিশ্চয়তা তাদের পথ দেখিয়েছে পরিচ্ছন্ন ও টেকসই জ্বালানির দিকে। এ পরিবর্তন শুধু পরিবেশগত বিকল্প নয়, বরং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও নিশ্চয়তা।

সূত্র:যায়যায় দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here