প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরিণতি কী হয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা।
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও চর্চার সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, আমাদের একটা ধারণা হয়েছে যে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছেন—সমস্ত কিছুর দায় তাদের। আমরা অন্যায় করব, অনিয়ম করব, ভোট জালিয়াতি করব, চুরি করব, ভোট আনতে দেব না—কিন্তু ইসিকে কাজটা করতে হবে। এটা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ইসির প্রতি আমাদের আস্থা আছে কিনা, তার চেয়ে বড় কথা হলো বর্তমান নির্বাচন কমিশন মনে করে কিনা যে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। যদি মনে করে তাহলে পরবর্তী নির্বাচনের দায় নিতে হবে। আর যদি মনে না করে তাহলে আগামী পাঁচ মাসে সরকারের কী করা উচিত তা জনসম্মুখে জানাতে হবে। তাহলে ইসির প্রতি জনআস্থা আসবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, এমন একটা পরিস্থিতিতে নির্বাচন করতে চাইছেন, সেটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। গত ২০ বছরের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই দিকটা লক্ষ্য রেখে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, ইতিহাসের পাতায় আপনাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মার্কা না দিলে মানি না—এটা ঠিক না। ইসি স্বাধীন। এ বিষয়ে চাপ দেওয়া উচিত না। যে মার্কা দেবে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। মার্কা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা উচিত না। রাষ্ট্র মেরামতের যে অপূর্ব সুযোগ ছাত্ররা এনেছেন, এই পরিস্থিতিতে যদি স্থানীয় নির্বাচন আগে করেন তাহলে একটা বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংসদ নির্বাচনটাই অবিতর্কিতভাবে সম্পন্ন করা উচিত।
কবি মোহন রায়হান বলেন, এখনও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা রয়েছে। তারা কিন্তু সুন্দর নির্বাচন হতে বাধা দেবে। এই বিষয়ে ইসিকে সজাগ থাকতে হবে। তবে নির্বাচন অবাধ করতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন আপনাদের সদিচ্ছা।
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইন বলেন, শুধু ঋণখেলাপিদের নয়, যারা অর্থপাচারকারী তারাও যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেই আইন করতে হবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে জনগণ আপনাদের প্রতি অনেক প্রত্যাশা রাখে। গত ১৫ বছর বা এখনও সহিংসতা নরমালাইজ হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় আপনারা এটা কিভাবে মোকাবিলা করবেন সেটা দেখার বিষয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ৫৫ বছর পরও নারীদের জন্য মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ আসনের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের ন্যূনতম দাবি—৩৩ শতাংশ আসন নারীদের জন্য নিশ্চিত করা। এছাড়া প্রবাসীদের সন্তানরা পড়াশোনার জন্য দেশে থাকে। তাদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণও গুরুত্ব দিতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম দফার এ সংলাপে প্রথমে ডাক পান সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা। এতে ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংলাপে অংশ নেন ১৪ জন। সিইসি সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আমন্ত্রিতদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ প্রমুখ।
সূত্র :যায়যায় দিন








