ষ্টাফ রিপোর্টার:
কুষ্টিয়া, ৩ জুন ২০২৫: কুষ্টিয়ার বিডিক শিল্প এলাকা বি, আর, বি গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, এমআরএস মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে বারবার আশ্বাস দিয়েও উদ্যোগ না নেওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছে শ্রমিকদের মধ্যে। সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রথমে কর্মবিরতি শুরু করেন এমআরএস মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শ্রমিকরা। এর পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শ্রমিকরাও কর্মবিরতিতে অংশ নেন। দুই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা কুষ্টিয়া শহরতলীর বিসিক শিল্প নগরীর সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এর আগেও গত ৮ মে একই দাবিতে এক দফা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন এমআরএস কারখানার শ্রমিকরা। সেদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের সঙ্গে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি শ্রমিক প্রতিনিধি দলের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় মালিকপক্ষ আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি শেষে কাজে ফেরেন। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় শ্রমিকরা পুনরায় বিক্ষোভে নেমেছেন। ১। বি আর বি গ্রুপের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এম আর এস ও কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর বেতন বি আর বি এর সাথে সমন্বয় ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করতে হবে। ২। সাপ্তাহিক ছুটির দিন অথবা অন্যান্য সরকারী ছুটির দিন ডিউটি করানো হলে বদলী ছুটির পরিবর্তে অতিরিক্ত কর্মঘন্টা হিসাবে ওভার টাইম প্রদান করতে হবে। ৩। কোম্পানীর নিয়মানুযায়ী যে সকল ছুটি শ্রমিক, কর্মচারী অথবা কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দ আছে তা যথাযথ ভাবে প্রদান করতে হবে। ৪। কর্মচারী/কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক প্রথা বাতিল করে চাকুরী স্থায়ীকরন করতে হবে। ৫। পরিবহন বিভাগের ড্রাইভার/হেলপার কারখানা হইতে দুপুর বারোটার পর ট্রিপে গেলে যে অর্ধেক ডিএ প্রথা আছে তা বাতিল করে পূর্ন ডি এ প্রদান করতে হবে। ৬। কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক আহত হলে তার চিকিৎসার সার্বিক ব্যবস্থা করতে হবে। এবং অসুস্থতার কারনে কর্মস্থলে যোগদান করতে না পারলে তার বেতনের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ৭। সরকার ঘোষিত করোনা কালীন সময়ে ছুটির পরেও কোম্পানী কর্তৃক যে বেতন প্রদান করা হয়েছিল তা অবসর কালীন সময়ে তিন মাসের বেতন কর্তন প্রথা বাতিল করতে হবে। ৮। জামানত এর টাকা ফেরত দিতে হবে। ৯। চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ১০। ওয়েল ফেয়ার ফান্ডে আবেদনকারীর আবেদন গুরুত্ব দিতে বিক্ষোভস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বিক্ষোভ যেন কোনোভাবে বিশৃঙ্খলায় রূপ না নেয়, সেজন্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ, র্যাব এবং সেনাবাহিনীর একটি দল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এমআরএস-এর একজন শ্রমিক বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। আমাদের ঘাম ঝরিয়ে এই কারখানা চলে, অথচ আমরা ন্যায্য পাওনা পাই না। যতক্ষণ না দাবি মানা হবে, আমরা কাজে ফিরবো না।” কিয়ামের এক নারী শ্রমিক বলেন, “একটা কোম্পানিতে ৮-১০ বছর কাজ করেও আমরা স্থায়ী হতে পারি না। এটা কি ন্যায্য? চিকিৎসা নেই, নিরাপত্তা নেই, অথচ চাপ বাড়ছে প্রতিদিন। এখনো পর্যন্ত বিআরবি গ্রুপের পক্ষ থেকে এই নতুন দফার আন্দোলন নিয়ে কোনো লিখিত বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। আগের আশ্বাসের ভিত্তিতে মালিকপক্ষ যে উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে—সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। শ্রমিকদের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হবে, ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি থেকে সরে আসবে না। তারা আশাবাদী, মালিকপক্ষ এবার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ পর্যায়ে র্যাব,সেনাবাহিনী এবং নির্বাহী কর্মকর্তা মালিক কর্তৃপক্ষর পক্ষে বলেন-আগামী জানুয়ারি মাসে সমস্ত বেতন বৃদ্ধি করবেন।। শ্রমিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হলেও -শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকারের দাবিতে এখনো পর্যন্ত মাঠে অবস্থান করছেন।
Enter