ইউরোপে অবৈধপথে অভিবাসন সামগ্রিকভাবে প্রায় ২২ শতাংশ কমলেও, মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগরপথে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করছে বাংলাদেশি নাগরিকরা। ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্স-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
অভিবাসনের প্রবণতা ও অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যান
ফ্রনটেক্সের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম আফ্রিকান রুট দিয়ে অবৈধ অভিবাসন কমেছে ৫৮ শতাংশ,
পশ্চিম বলকান রুটে কমেছে ৪৭ শতাংশ,
আর পূর্ব ইউরোপের স্থলসীমান্তে কমেছে ৩৬ শতাংশ।
তবে মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগরপথ এখনও সবচেয়ে সক্রিয় রুট হিসেবে রয়েছে। ইউরোপে মোট অবৈধ প্রবেশকারীদের প্রায় ৪০ শতাংশই ইতালি হয়ে এই পথ দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করছে।
অন্যদিকে, পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অবৈধ প্রবেশ ২৮ শতাংশ বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে এ রুটে অভিবাসন বৃদ্ধি পেয়েছে অর্ধেকেরও বেশি, যেখানে আলজেরিয়া থেকে যাত্রা করা অভিবাসীরাই প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া ও মরক্কো।
বাংলাদেশিদের অবস্থান সবচেয়ে শীর্ষে
ফ্রনটেক্সের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অবৈধপথে ইউরোপে প্রবেশকারীদের মধ্যে বাংলাদেশি, মিসরীয় ও আফগান নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি। শুধু মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগরপথেই জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার ৯০০ জন অভিবাসী, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।
যদিও এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় সমান, তবুও লিবিয়া থেকে নৌকা ও ট্রলারে ইউরোপগামী অভিবাসীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৫ সালের এই বৃদ্ধি ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের পুরো বছরের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
পূর্ব ও পশ্চিম রুটে প্রবেশ কমেছে
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুট দিয়ে অবৈধ প্রবেশ কমেছে ২২ শতাংশ— যার সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার ২০০ জন। অন্যদিকে, পশ্চিম আফ্রিকান রুটে অবৈধ প্রবেশ কমেছে সর্বোচ্চ হারে— প্রায় ৫৮ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৭৯ জন।
মানবিক সংকট এখনো গভীর
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ২৯৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সংস্থাটির মতে, অবৈধ প্রবেশের হার কিছুটা কমলেও মানবিক সংকট এখনও তীব্র। মানুষ এখনো ইউরোপে প্রবেশের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের দিকে অভিবাসন বৃদ্ধি
ফ্রনটেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্স হয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা বেড়েছে ১৪ শতাংশ। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৫৪ হাজার ৩০০ জন যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় সীমান্তে কড়া নজরদারি ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে অভিবাসীরা এখন নতুন রুট ও কৌশল অবলম্বন করছে। এতে তাদের জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
সূত্র :যায়যায় দিন








