বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আবারও বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খবর: রয়টার্স ও দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন।
গতকাল আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৬ সেন্ট বা ০.৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ ডলার ৪৭ সেন্টে। অপরদিকে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম ৫৮ সেন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলার ৮৫ সেন্টে পৌঁছায়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা ও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (IEA) সরবরাহ-সংক্রান্ত সতর্কবার্তার কারণে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমে গিয়েছিল।
ভারত বর্তমানে তার মোট তেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করে। ট্রাম্প জানান, দেশটি শিগগিরই রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ক্রয় বন্ধ করবে। তবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো স্থিতিশীল জ্বালানির মূল্য ও সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদিও দেশটি ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কিছু বলেনি।
রয়টার্স–এর তিনটি সূত্র জানায়, ভারতের কিছু তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে রাশিয়ার তেল আমদানি কমানোর পরিকল্পনা করছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও জানান, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে জাপানও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করবে।
আইজির বাজার বিশ্লেষক টনি সাইক্যামোর বলেন, ‘ভারত রাশিয়ার অন্যতম বড় ক্রেতা। যদি তারা আমদানি কমায়, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়বে।’
শিপিং ডাটা অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি ৮.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দাম কম ছাড় ও সরবরাহ সংকট এর মূল কারণ। ভারত এখন মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভারতের একটি শীর্ষ তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান দৈনিক ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছিল। সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৬ লাখ ব্যারেলে নেমে আসে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.২ শতাংশ কম।
এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাশিয়ার শীর্ষ জ্বালানি কোম্পানি রোসনেফট ও লুকোইল, এবং সংশ্লিষ্ট চারটি জ্বালানি টার্মিনালের ওপর। এর মধ্যে রয়েছে চীনের শানডং ইয়ুলং পেট্রোকেমিক্যাল ও ভারতের রুশ মালিকানাধীন নায়ারা এনার্জি লিমিটেড।
মার্কিন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (EIA) জানিয়েছে, তেলের মজুদ বৃদ্ধির তথ্যও দামের ওপর প্রভাব ফেলছে। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (API) অনুসারে, অপরিশোধিত তেলের মজুদ ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল এবং গ্যাসোলিনের মজুদ ২৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে, তবে ডিস্টিলেটের মজুদ ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল কমেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিস্টিলেটের মজুদ কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা আরও বাড়তে পারে, যা দামের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রাখতে পারে।
সূত্র :যায়যায় দিন








