Home অর্থনীতি বাংলাদেশকে রাজস্ব ও আর্থিক খাত সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে

বাংলাদেশকে রাজস্ব ও আর্থিক খাত সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে

9
0

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেছেন, বাংলাদেশকে রাজস্ব ও আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার (ওয়াশিংটন সময়) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলমান সংস্কারই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে।

কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন জানান, বাংলাদেশে আইএমএফের ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য শিগগিরই একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করবে। এ সফরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে দুটি খাতে—রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে গৃহীত পদক্ষেপের মূল্যায়নে।

তিনি বলেন, “চলমান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে রাজস্ব প্রশাসন, ব্যাংকিং খাত ও মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনায় ধারাবাহিক সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। এসব পদক্ষেপ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে অগ্রসর হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হতে পারে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশে নামতে পারে। পরবর্তী অর্থবছরে এটি আরও হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

আইএমএফ বলেছে, সংস্কার বাস্তবায়নের ধীরগতি ও প্রত্যাশার তুলনায় মূল্যস্ফীতি কম না হওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা এবং বৈশ্বিক নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকিও রয়ে গেছে।

এদিকে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হয়েছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা। এবারের বৈঠকে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সদস্যদেশগুলোর ঋণ পরিস্থিতি।

সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৬টি দেশ মিলে বর্তমানে আইএমএফের কাছে প্রায় ১৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণী। এর মধ্যে শীর্ষ তিন দেশই মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকের দায়ভার বহন করছে।

সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত দেশ আর্জেন্টিনা, যার বকেয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন, যার ঋণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিসর, যার ঋণ ৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই তিন দেশ মিলে আইএমএফের মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকের প্রতিনিধিত্ব করছে।

আর্জেন্টিনা বর্তমানে আইএমএফের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা দেশ। অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে দেশটি বহুবার সংস্থাটির সহায়তা নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে দেশটি ৫৭ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ঋণ নেয়, যা আইএমএফের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের এপ্রিলে আর্জেন্টিনা আরও ২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা কর্মসূচি পায়। এছাড়া ২০২৫ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে ২০ বিলিয়ন ডলারের ডলার–পেসো বিনিময় সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here