Home রাজনীতি ‘এখান থেকে বের হওয়ার উপায় নাই’ : জুলাই সনদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা

‘এখান থেকে বের হওয়ার উপায় নাই’ : জুলাই সনদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা

3
0

জুলাই সনদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখান থেকে বের হওয়ার উপায় নাই। যে সমঝোতার রাস্তা শুরু করেছি, তা থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সমঝোতায় আসতেই হবে। আমি হয়তো গায়ের জোরে বলছি, কিন্তু কথাটা ফেলে দেওয়ার উপায় নেই। জাতি হিসেবে আমাদের নবযাত্রার সুযোগ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিয়ে গেল, সেটার একমাত্র সমাধান হল সমঝোতার পথে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। আমরা নানা যুক্তি দিতে পারি। যুক্তির কোনো শেষ নাই। কিন্তু সমাধানের পথে থাকতে হবে। অনেকের মনে হয়তো কষ্ট হবে, কষ্ট হলেও মেনে নিচ্ছি। কিন্তু পরে শান্তি পাবেন, দেশ শান্তি পাবে বলে। কারণ, দেশের শান্তি বড় শান্তি। আমরা বিতর্কের মধ্যে থেকে গেলে, সেটা কখন বিস্ফোরিত হবে। বিতর্কের মধ্যে থেকে কে কোন দিকে চালু করে দেবে, এটার কোন ঠিক নেই।

আজ রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় ধাপের সংলাপের দ্বিতীয় দিনে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে রাজনীতিবিদদের দেওয়া বক্তব্য টেলিভিশনের মাধ্যমে শুনেছেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের শুরু প্রক্রিয়ার কথা জানান

কারও মুখ দেখা দেখি নাই, এরকম হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি আলাপে বসবে কিনা, কার ঐকমত্য কমিশনের কোনো নজির নেই। এ নতুন প্রচেষ্টাটা বই থেকে বের করা জিনিস না। বর্তমান পরিস্থিতি উপলক্ষ্য করে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি হিসেবে চেষ্টা করে দেখলাম। দীর্ঘপথ অতিক্রমের পরে আমি আভির্ভুত হয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

ঐকমত্য কমিশন বিশ্বের জন্য নজির হিসেবে থাকবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটা যেন খুতওয়ালা নজির না, এ আবেদন আমার। এমন নজির সারাবিশ্ব দেখবে এবং অনুসরণ করার চেষ্টা করবে। কারণ, আপনারা মূল কাজটা করে পেলেছেন, সামান্য রাস্তা বাকি। সবকিছু নির্ভর করছে শেষ অংশটুকুর উপরে।

রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছেন। বাকি রাস্তাটুকু যাতে সুন্দরভাবে সমাপ্ত করে পৃথিবীর জন্য নজির সৃষ্টি করে যাবেন। যে সমস্যা অতিক্রমের জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, সেটা শুধু আমাদের নয়, দুইদিন আগে নেপালে শুরু হল, এরকম বহুজনের সমস্যা হবে। অতীতে হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। তাই, আমাদের সমাধানের পথ সবাই মনোযোগ সহকারে দেখবে।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কথা পুর্নব্যক্ত করে তিনি বলেন, নির্বাচন মহোৎসবের হবে, মহোৎসবের নির্বাচন হবে। যদি আমরা আমাদের এগুলো ফয়সালা করে ফেলতে পারি তাহলে এটা মহাউৎসব এবং জাতির সত্যিকার নবজন্ম হবে। এটা শুধু নির্বাচন না, এটা নবজন্ম। এত ত্যাগ, রক্ত-আত্মাহুতি স্বার্থক হবে যদি আমরা নবজন্মটা লাভ করতে পারি।

ছাত্র জনতা গণঅভ্যুত্থানের আলাদিনের চেরাগের দৈত্য তৈরি করে দিয়েছে মন্তব্য করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা তার কাছে কি চাইব? আমরা কি তার কাছে এককাপ চা চাইব? না দুনিয়া পাল্টে ফেলতে চাইব। এটি হল আমাদের হাতে। কোনো বিষয় ছোট আকারে না রেখে, এই জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি করে দিয়ে যাব। এ সুযোগটা এসেছে। সেখানে ছোটখাট বিষয়ের মধ্যে আটকে গিয়ে আমরা যেন মূল বড় জিনিস থেকে হারিয়ে না ফেলি। বড় জিনিসের জন্য যাই। এই জাতিকে আমরা ভালভাবে চালু করে দিলাম এটা খালি উপর থেকে উঠবে, ডানে-বায়ে দরকার নেই। ওই অংশটা করেন।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বৈরাচার আসার সব পথঘাট বন্ধ করা; যাতে কোন দিক দিয়ে স্বৈরাচার আসতে না পারে। বাকিটা আমরা জানি। স্বৈরাচার বন্ধ করতে হলে সবাইকে একমত হয়ে কাজ করতে হবে। দ্বিমতের জায়গা নেই। দ্বিমত করলে সমাপ্ত করতে পারব না। সবাইকে একমত হয়ে সনদ করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তাহলে নির্বাচন স্বার্থক হবে। যতই আমরা নোক্তা দিয়ে যাই কিন্তু আমাদের মহান ঐক্য দরকার। কি চাই সেটা ঠিক করলেই, কিভাবে করবে তা দৈত্য ঠিক করবে। কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা বিশেষজ্ঞদের বলব, এটা করে দাও। সে পথে অগ্রসর হতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ওই দৈত্যকে আমরা বড় কাজটা দেব। যেটা আর কোনদিন চাইবারও সুযোগ পাবে না। এ দৈত্য একবারই পাচ্ছি আমরা। আমাদের মনের সমস্ত আশা পূরণের দায়িত্ব তার ঘাড়ে দিয়ে দেব। সে দিকে আমরা যেতে চাই।

ড. ইউনূস বলেন, ভেতরে কোন রকমের দুশ্চিন্তা রেখে আমাদের যেন নির্বাচনে ঢুকতে না হয়। উৎসব এখান থেকে শুরু হবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথামার্ধেই হবে। এটাই হল পথ। আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি। এ পথেই যাব। আমাদের আবেদন সব পথঘাট বন্ধ করতে হবে, যাতে কোনো জায়গা দিয়ে ঢুকতে (স্বৈরাচার) না পারে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজটা করে ফেলতে পারলে আমাদের দেশ নিশ্চিন্ত হবে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আমাদের থেকে শিখতে আসবে।

ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম ভালোভাবে শেষ করার অনুরোধ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কাজ যেন নিখুত ও নির্দোষ হয়। এমনভাবে করব যাতে তা হতে নতুন জাতি জন্মগ্রহণ করবে। আপনারা নতুন জাতির সূতিকাগার তৈরি করে দিলেন। মনের মধ্যে যাতে খুতখুতি না নিয়ে সবাই যাতে নির্বাচন পর্যন্ত যেতে পারে সে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন

সূত্র :যায়যায় দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here