Home সারাদেশ ঋণে জর্জরিত নিউ অলিম্পিয়া মিল: পুনরুজ্জীবনের আশায় শ্রমিকরা

ঋণে জর্জরিত নিউ অলিম্পিয়া মিল: পুনরুজ্জীবনের আশায় শ্রমিকরা

15
0

গাজীপুরের টঙ্গীর শিল্পাঞ্চলে এক সময় কর্মচাঞ্চল্যে মুখর ছিল নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস। হাজারো শ্রমিকের পদচারণায় সরব এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান আজ অতীতের স্মৃতি বহন করছে।

প্রায় দুই দশক আগে শ্রমিক মালিকানায় হস্তান্তরিত মিলটি এখন ঋণ ও সংকটের বোঝা নিয়ে নামমাত্রভাবে টিকে আছে। ২০০১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলো দীর্ঘদিন লোকসানে চলার কারণে সরকার “Workers-run Textile Mills Project” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের কয়েকটি মিলের মতোই নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলসের মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্ব শ্রমিক-কর্মচারী মালিকানা পরিচালনা বোর্ডের (Workers Ownership Management Board) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, মিলটির আইডিএ ক্রেডিটের কাছে ছিল ১৬ কোটি টাকা ঋণ এবং স্টোরের মালামাল বাবদ আরও প্রায় ২ কোটি টাকা দায়। মোট ১৮ কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিক বোর্ড সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে, যেখানে প্রতি ত্রৈমাসিকে ৪০ লক্ষ টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়।

চুক্তিতে সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস থাকলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ফলে উৎপাদন সম্প্রসারণ বা আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি, ক্রমে মিলটি লোকসানে পড়ে। ২০১৩ সালে শ্রমিক বোর্ড সরকারের কাছে সুদ ও দণ্ডসুদ মওকুফের আবেদন জানায়। পরবর্তীতে সরকার ৬৫% সুদ এবং ১০০% দণ্ডসুদ মওকুফ করে দেয়। সে সময় বোর্ড ২২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে প্রায় ৪৪ কোটি টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে এক সময়ের সমৃদ্ধ এই টেক্সটাইল মিলটি এখন কেবল সীমিত আকারে টিকে আছে। পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে আংশিক ডাইং ফ্যাক্টরি চালু রাখা হয়েছে এবং কিছু গুদামঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক বোর্ডের ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি ব্যালেন্স।

বোর্ডের দাবি, সরকার যদি আর্থিক সহায়তা দেয় বা অবশিষ্ট সুদ মওকুফ করে, তাহলে তারা বকেয়া ঋণ পরিশোধ করে মিলটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে পারবে। বর্তমানে নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের ৮১৪ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন। তাদের মতে, সরকারের সহযোগিতা ও যৌথ অংশীদারত্বের (Joint Partnership) মাধ্যমে মিলটি পুনরায় চালু করা সম্ভব। এতে প্রায় ১৪-১৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে এবং সরকারও পাবে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব।

নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হাসেম বলেন, “আমরা চাই সরকার আমাদের প্রতি আস্থা রাখুক। যদি সুদ মওকুফ করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়, তাহলে আমরা একবারে সব টাকা পরিশোধ করে নিউ অলিম্পিয়াকে আবার সচল করব। এতে শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটবে এবং টঙ্গীর অর্থনীতি নতুন করে প্রাণ পাবে।”

যদিও মিলটি এখন বন্ধপ্রায়, শ্রমিকরা এখনও আশাবাদী। তাদের বিশ্বাস, সরকারের সামান্য সহযোগিতা পেলে নিউ অলিম্পিয়া মিলস আবারও টঙ্গীর শিল্পায়নের গৌরবময় প্রতীক হয়ে উঠবে। স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রমিকদের উদ্যম ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মিললে এটি শ্রমিক মালিকানাধীন শিল্পের পুনরুজ্জীবনের সফল উদাহরণ হতে পারে।

সূত্র:যায়যায় দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here